Romantic Love Story (সাঁঝের প্রেম - পর্ব_২) Sad Love Story
Are you searching love story in Bangla language you will find here many types of Bangla story like a romantic love story, cute love story, heart touching love story, Islamic love story, Bangla golpo, story, real love story, Bangla Islamic Story, new love story, valobasar golpo, premer golpo, Bangla love story, I hope you are like our collections if you like our collection please connect with us.সাঁঝের_প্রেমPart_2Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
নিশির প্রতিটা রাতই নির্ঘুম আর অসহ্য যন্ত্রণায় কাটে। একদিকে মাহবুবের থেকে দূরে থাকার কষ্ট অন্যদিকে পরিবারের কষ্ট। নিশি পরেরদিন অফিসে গিয়ে বসকে জানিয়ে দেয় সে চিটাগং যাবে। নিশি পোস্টিং লেটার নিয়ে সেদিন অফিস শেষ করে বাড়িতে চলে আসে। বাসায় এসে সব গোছায় নিশি। কাপড় গোছাতে গোছাতে নিশি ভাবে,
-ও কি আছে এখনো চিটাগং এ? নাকি বাইরে চলে গেছে? চিটাগং গেলে কি ওকে এক নজর দেখতে পারব? কেমন আছে ও? আগে তো স্বাস্থ্য ভালো ছিলো। এখন কি চিকন হয়ে গেছে? বউ বাচ্চা নিয়ে নিশ্চই ভালো আছে ও তাইনা? আচ্ছা ওর কয়টা ছেলে মেয়ে হয়েছে? (নিশি এলোপাতাড়ি এসব ভাবছিলো)
কাপড় গুছিয়ে নিশি নামাজ সেড়ে ডিনার করে তুর্নার হোমওয়ার্ক চেক করে। তুর্না বড় বোনের দায়িত্বে বেশ ভালো ছিলো এতদিন। তুর্না নিশিকে বলল,
-আপু তুমি চলে গেলে আমায় কে দেখবে?
-আম্মু আছে তো বোন।
-তোমার অভাব কি আম্মুকে দিয়ে পূরণ হবে আপু?
-কয়েকটা মাসই তো বোন। একটু কষ্ট কর।
-হুম আপু। তুমি ঘুমাও। সকালে তো আবার ট্রেন ধরতে হবে।
-হ্যা। তুই পড়।
নিশি কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পরলো। সকালে নিশিকে স্টেশনে ছাড়তে মা আর তুর্না দুজনেই গেলো। নিশির ট্রেন ছাড়া না অবধি সেখানে ওরা দাঁড়িয়ে রইলো। আম্মুকে কাঁদতে নিষেধ করে নিশি। ট্রেনে উঠে দেখে জানালার ধারে সিট পরেছে নিশির। নিশি মুচকি হেসে সিটে বসে আর ট্রেন চলতে শুরু করে। নিশি, তুর্না আর আম্মুকে বিদায় জানিয়ে চলছে চিটাগং এর উদ্দেশ্যে। কিছুদূর যাওয়ার পর নিশির মনে পরে যায় ওর প্রথম ভালবাসা, প্রথম প্রেমের কথা। নিশি শিউরে উঠে। জানালার ধারে হ্যালান দিয়ে নিশি মাহবুবের কথা ভাবতে শুরু করে।
"নিশি মাহবুবকে আইডি কার্ড ফেরত দিয়ে আসার পর বাবার হাতে অনেক বকুনি খায় দেরি হয়েছে বলে। নিশি কোনোরকম বাবাকে সামলায়। পরেরদিন বাসস্ট্যান্ডে নিশি বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছে। নিশির চোখ বারবার মাহবুবকে খুঁজছে। একটু পরেই মাহবুব দৌড়ে বাসস্ট্যান্ডে আসে। ও ভেবেছে হয়ত বাস মিস। নিশিকে দেখে মাহবুব চশমা ঠিক করে এগিয়ে যায়। এস কালার একটা শার্ট আর প্যান্ট পরা ছিলো মাহবুব।
-এই যে আপু হ্যালো! (মাহবুব)
-আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। ভালো আছেন? (চমকে গিয়ে নিশি)
-ওয়ালাইকুম সালাম। বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছো?
-হ্যা ভার্সিটির বাস।
-কোন ভার্সিটি?
-জবি।
-ওহ কোন ইয়ার?
-ফার্স্ট ইয়ার, বোটানির স্টুডেন্ট।
-বাহ! ভালো তো। তোমার নাম কি?
-নিশি।
-এত সুন্দর একটা মেয়ের নাম নিশি হয় কি করে?
-সুন্দর মেয়ের নাম নিশি হয়না কেনো? (হাত মুড়িয়ে নিশি)
-নিশি মানেই তো অন্ধকার বা সাঁঝবেলা তাই। আর তুমি তো আলো।
-হাহাহাহাহা। বাস এসে গেছে আপনার!
-ও হ্যা! বাই।
-বাই।
মাহবুবের বাস চলে যাওয়ার পর নিশির ভার্সিটির বাস এলো। নিশি বাসে বসে নখ কামড়াচ্ছে আর ভাবছে,
-মজার মানুষ অনেক। কিন্তু চেহারার সাথে ক্যারেক্টারের কোনো মিল নেই। চেহারাটা কেমন যেন রাগী রাগী আর ইনোসেন্ট। উনি কি এতটা ইনোসেন্ট নাকি? হাহাহাহা। চুলগুলো আর চোখের কালো মোটা ফ্রেমের চশমাটা ওনার সাথে মানানসই।
নিশি ভার্সিটি থেকে ফেরার পর চেঞ্জ করে তুর্নার সাথে খেলে। তুর্না তখন ক্লাস এইটে পড়ে। নিশির বাবা প্রচন্ড রাগী আর একরোখা। কারো কথা শোনানো যায়না তাকে।
এভাবে প্রতিদিন সকালবেলা ৩/৪ মিনিট কথা হতো দুজনের। নিশির গ্যাঁজ দাঁতের হাসি মাহবুবের অনেক ভালো লাগে। মাহবুব এঞ্জয় করে অনেক নিশির পালটা জবাব গুলোকে আর নিশি মাহবুবের মজার কথায় হেসে কুটিকুটি হয়ে যেত। একদিন নিশি সকালে বাসস্ট্যান্ডে আসেনি। মাহবুব সবার মাঝে নিশিকে খোঁজে কিনতু পায়না। এরপর মাহবুব চারদিকে তাঁকিয়ে মন খারাপ করে বাসে উঠে যায়। নিশির নাম্বারটা নিয়েছিলো ঠিকই কিন্তু কখনো ফোন করা হয়নি। ফোন কি করবে? অনেক ভেবে মাহবুব আর ফোন করেনি কিন্তু মন ও মানছে না। ওর হাসিটা তো একবার হলেও দেখতে হবে। ওর হরিণী চোখে যে আক্রমণাত্মক দৃষ্টি আছে। আস্তে আস্তে কি তবে ঘায়েল করে ফেলছে আমায়? মাহবুব নিশির নাম্বার বের করেই বসে থাকে কিন্তু ফোন দেয়না। রাতে বাসায় ফিরে মাহবুব ডিনার না করেই নিশিকে প্রথমবারের মতো ফোন দেয়। নিশি বলেছিলো ওর বাবা অনেক রাগী। যদি সে পাশে থাকে? রিং হওয়ার পর তুর্না ফোনটা রিসিভ করে।
-আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন? (তুর্না)
-নিশি আছে।
-হ্যা আপু আছে। আপনি কে?
-আমি তোমার আপুর ব্যাচমেট। তোমার আপুর কাছে একটা নোটস আছে আমার। ও তো আজ ভার্সটিতে আসেনি তাই আর কি! (মিথ্যে বলল মাহবুব যাতে নিশির কোনো সমস্যা না হয়)
-আপুর তো প্রচন্ড জ্বর তাই আসতে পারেনি। আপু এখন ঘুমুচ্ছে। জাগলে আমি বলব আপনার কথা। ভাইয়া আপনার নাম?
-মাহবুব।
মাহবুব ফোন কেটে দিলো। নিশির জ্বরের কথা শুনে মাহবুবের বুকে কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠলো। সেইদিন রাতে আর মাহবুব ডিনার করতে পারলো না। মন খারাপ করে মাহবুব ঘুমিয়ে যায়। রাত আড়াইটায় মাহবুবের ফোন বাজে। বালিশের নিচ থেকে মাহবুব ফোন বের করে দেখে calling from Nishi. মাহবুব ফোনটা কেটে কলব্যাক করে।
-ফোন দিয়েছিলেন আপনি? (গোঙাতে গোঙাতে নিশি)
-হ্যা। কিন্তু তোমার এই অবস্থা কেন? (টি শার্ট ঠিক করে উঠে দাঁড়ায় মাহবুব)
-হঠাৎ করেই জ্বর আসে।
-মেডিসিন খেয়েছো?
-না।
-না মানে? (হাইপার হয়ে মাহবুব)
-কালকে ডক্টর দেখিয়ে মেডিসিন খাব।
-তোমরা যেন কয়তলায় থাকো?
-সেকেন্ড ফ্লোরে।
-বিশ মিনিটের মধ্যে আমি মেডিসিন নিয়ে আসছি। Somehow একটু নিচে নামো।
-কি বলছেন কি আপনি? এখন রাত আড়াইটা বাজে।(অবাক হয়ে নিশি)
-So what? আর তুমি নামতে না পারলে ঠিক আছে। আমি আসছি। রাখছি ফোন।
মাহবুব ওর ফার্স্ট এইড বক্স থেকে জ্বর, ঠান্ডা আর ব্যাথার ওষুধ নিয়ে বের হতে যাবে তখন ওর মনে পরে ওর ডাক্তার বন্ধু রিয়নের কথা। রিয়ন কে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে ওষুধ গুলো দেওয়া ঠিক হবে কি না! রিয়ন হ্যা বলার পর মাহবুব চোখে চশমা পরে আর ট্রাউজার আর টি শার্ট পরেই বেরিয়ে যায়। পুরো রাস্তা ফাঁকা তবে সেইফ। মাহবুব হেঁটে হেঁটেই গেলো নিশির বাসার সামনে। সেখানে গিয়ে দেখলো গেইটের ভেতরে তিনতলার সমান মই আছে। মাহবুব নিশিকে ফোন করে বলে,
-বারান্দায় এসে দাঁড়াও।
-মানে কি? আপনি সত্যি সত্যি এসেছেন?
-মাহবুব যা বলে তা করে। তারাতারি আসো।
মাহবুব নিশির ঘরের বারান্দা বরাবর মই দাঁড় করিয়ে সেইটা দিয়ে নিশির বারান্দা অবধি উঠে। নিশি মাহবুবকে দেখে বিশ্বাস ই করতে পারছেনা। নিশির চুল এলোমেলো, শরীরে ওড়না নেই, দাঁড়াতে পারছেনা ঠিক করে। নিশির এই অবস্থা দেখে মাহবুব অন্যদিকে তাঁকিয়ে বলে,
-এগুলো এক্ষুণি খাও আর এই যে একটা কেক। (কেক আর মেডিসিন এগিয়ে দিয়ে মাহবুব)
-আপনি কি পাগল? (অস্বাভাবিক গলায় নিশি)
-হ্যা আমি পাগল। একটু পর আবার ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করব খেয়েছো কি না। তারাতারি রুমে যাও আর এগুলো খাও৷
-ভাইয়া এগুলো কি?
-মেডিসিন দেখতেই তো পারছো। আমি আসছি। টেক কেয়ার।
মাহবুব সেদিন চলে আসে। মইটা আবার ঠিক করে রেখে বেরিয়ে চলে আসে ও। নিশি এক দৃষ্টিতে বাইরে তাঁকিয়ে আছে। মাহবুব নিচে নেমে ইশারা করে বলল তারাতারি মেডিসিন খেতে। তাড়াহুরোয় নিশি খেয়ালই করেনি যে ওর শরীরে ওড়না নেই। নিশি তখন চরম লজ্জা পায়। এইজন্যই মাহবুব অন্যদিকে তাঁকিয়ে কথা বলছিলো? ছিহ কি হলো এইটা? তুর্না ঘুমাচ্ছে। কিছুই টের পায়নি ও। নিশি কেকের প্যাকেটের দুই পিস খেয়ে ওষুধ খায়। মাহবুব বাসায় গিয়ে ফোন করে নিশিকে জিজ্ঞেস করে,
-খেয়েছো?
-হ্যা। আপনি গিয়েছেন তো বাসায়?
-হ্যা মাত্রই।
-এই পাগলামি কখনো কেউ করে ভাইয়া? এত রাতে আপনি চলে এলেন!
-আজকে বাসস্ট্যান্ডে তোমায় না দেখতে পেয়ে সারাদিনই অস্থির ছিলাম। তোমার হাসিটা মিস করছিলাম বেশি। তোমার জ্বরের কথা শুনে আমি খেতেই পারিনি। ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম এরপর তো তোমার ফোনের আওয়াজেই জাগলাম।
-কেনো? আমার জন্য কেনো আপনার এমন হবে? (নিশির বুক কাঁপছে)
-জানো তো নিশি এইটা আমারো প্রশ্ন! কেন আমার এমন হচ্ছে?
-খুব বেশি গভীরে চলে যাচ্ছেন আপনি ভাইয়া!
-হয়ত! গেলে কি খুব বেশি ক্ষতি হবে নিশি?
-জানিনা আমি। ঘুমান। শুভ রাত্রি।
নিশি ফোন কেটে দিয়ে কাঁপছে। মরণ প্রেম কি এভাবেই আসে? বুকের লাবডাব আওয়াজটা যে কিছুতেই কমানো যাচ্ছেনা! এ কিসের যন্ত্রণা? নিশি ওষুধ খাওয়ার জন্য ঘুমিয়ে যায়। আর মাহবুব ভয় পাচ্ছে। ওর ভয় হচ্ছে নিশিকে সত্যি কথাটা বলে কি ও ভুল করেছে? নিশি যদি এখন ওর বন্ধুত্বটাও নষ্ট করে দেয়? এসব ভেবেই মাহবুব সে রাতে আর ঘুমাতে পারেনি। পরবর্তী চারদিন নিশি ভার্সিটিতে যায়নি। কিন্তু মাহবুব ওর খোঁজ নিয়েছে। পাঁচদিনের দিন বাসস্ট্যান্ডে,,,,,,,
-নিশি তুমিইইই? সুস্থ আছো এখন? (অস্থির হয়ে মাহবুব)
-হ্যা। (একটু সরে দাঁড়িয়ে নিশি)
-আজকে বাস আসবেনা।
-কেনো?
-হরতাল হচ্ছে।
-ওহ নো!
-কথা বলবেনা আমার সাথে?
-বলছি তো। (নিচের দিকে তাঁকিয়ে নিশি)
-ঘামছো কেনো? হাত কেনো কাঁপছে? (নিশির হাতের দিকে তাঁকিয়ে মাহবুব)
-গরম তো তাই!
-পানি খাও।
-কেনো কাঁপছি আপনি বুঝবেন না! এখন আপনার সামনে আসলেই যে আমার এমন হয়। (মনে মনে নিশি)
-কি হলো খাও।
-হুম।
-বাসায় যাবেনা? আজ তো ভার্সিটিতে যেতে পারবেনা।
-অনেকদিন পর একটু ছুটি পেয়েছি। তাই তানিয়াকে নিয়ে একটু বলদা গার্ডেনে যাব ভাবছি।
-কেনো?
-প্র্যাক্টিক্যালের জন্য কিছু গাছ কালেক্ট করতে হবে তাই। আপনি অফিসে যাবেন না?
-নেই আজ অফিস।
-তাই টিশার্ট পরেই বেরিয়ে গেছেন?
-হুম। যাবে কিভাবে? গাড়ি তো নেই!
-রিক্সা চলে তো। রিক্সাতেই চলে যাব। বেশি দূর তো নয়।
-কাকে কল করছো?
-তানিয়াকে।
-এক মিনিট!
-কি?
-আমি যাই তোমার সাথে? (ভয়ে ভয়ে মাহবুব)
-না।
-প্লিজ!
-আপনি কেনো যাবেন? (নিশি ওড়নার সাথে আঙুল মোঁচড়াচ্ছে)
-এমনিই যাব। যাবে আমার সাথে?
-একবার না বলেছি।
এই কথা বলে নিশি হাঁটতে শুরু করলো। মাহবুব বাসস্ট্যান্ডেই দাঁড়িয়ে রইলো।
-ম্যাম আপনার টিকেট টা দিন। (টিকেট চেকারের ডাকে ঘোর স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে এলো নিশি)
-ও হ্যা এই নিন।
-ঠিক আছে।
চলবে
0 Comments