ভাগ্যের লিখন - আয়েশা সিদ্দিকা | Vagger Likhon - Ayesha Siddika
এই প্রথম অনুষ্ঠান আমাদের।ছেলে ভালো একটা চাকরি করে।মা নেই বাবা আর দুই ভাই দুই বোন এক ভাবী আছে বাড়িতে আর বোন দুইটার বিয়ে হয়ে গেছে।ভালো ফ্যামিলি দেখে বাবা রাজি হয়েছে।তা নাহলে বাবা খুবই কড়াকড়ি স্বভাবের।আমাদের সব সময় শাসনে রাখতেন স্কুল কলেজ জীবনে।
আমরা মধ্যবিত্ত পরিবার। বাবার পেনশনের টাকা দিয়েই আপুর বিয়ের অনুষ্ঠান হবে।আর আমার কথা কি বলবো আমার জন্ম থেকেই একটু কেমন থাকেনা ছেলে আশা করেছিল সবাই এক মেয়ের পর আমি আরেকটা মেয়ে কিছুটা অনিহা ছিল আমার প্রতি।এই ধরুন জামা কাপড় বই খাতা সব কিছুই পুরোনো জুটতো আমার কপালে।
আমি আর আপু দেড় বছরের ছোট বড়।তো আপুর বই জামা জুতা শীতের কাপড় সবই আমার হতো।নতুন কোন জিনিস আমার কপালে খুব কম জুটতো।শুধু ঈদের জামা ছাড়া সবকিছুই ধরতে গেলে পুরোনো ব্যবহার করতাম আমি।বাবা আর আপু বলতো আমার গত বছরের পার্টি ড্রেসটা তো নতুনের মতোই এটাই তো দিশা পড়তে পারে কিন্তু মা বলেছে না ঈদের দিন ও কোন পুরোনো জামা পড়বে না ওকে নতুন জামাই কিনে দিতে হবে দরকার হয় আমি কিছু কিনব না।একেই বলে মা।শুধুমাত্র মা ই পারে সব সন্তানকে একই ভালোবাসা দিতে।বাবা ও আমাকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু কি করবে,এশা আপুর সবকিছু আমি ব্যবহার করলে অনেকটা খরচ কমে যায় এটা মনে করেই হয়তো বাবা এরকম করে।
আমার কাছে মনে হয় আপুকে একটু বেশি আদর করে বাবা মা।ওর সব চাওয়া পূরণ করার চেষ্টা করে আমি অবশ্য কিছু আবদার করার সুযোগ পাই না কারন আপুর ব্যবহৃত সবকিছুই আমি পাই।
যাক সেসব কথা আজ আপনাদের দিন ওসব কথা মনে করে কষ্ট পাওয়ার দরকার নেই।তবে বাবা আমাকে আপুর বিয়ে উপলক্ষে খুব সুন্দর একটা ড্রেস কিনে দিয়েছে।কাল গায়ে হলুদ পালন করলাম।আর আজ বিয়ে সকাল থেকে কত ব্যস্ততা সবার।আপুকে পার্লারে নিয়ে যেতে হবে।আপুকে গোসল করানোর জন্য এক ভাবী কোলে করে একটা পিড়িতে বসালো।তারপর পান টান দিয়ে কি যেন করল।সবাই একটু একটু হলুদ লাগাল।তারপর কলসি ভরে পানি ঢালতে লাগল একে একে।আপু ওয়াশরুমে গিয়ে নিজের মতো ফ্রেশ হয়ে বের হলো।আমি বললাম আমি গোসল করে নেই তোমার সাথে যাবো।কিন্তু আপু বললো তোর যেতে হবে না অনু যাবে (খালাতো বোন) তুই বাসায় থাক বাবার অনেক হেল্প হবে।মা কে বললাম,মাও বললো তুই বাসায় থাক এতে অনেক সুবিধা হবে।কিন্তু আমার ইচ্ছে ছিল আজ পার্লার থেকে সাজার।আপুর হলেই বলবো আমাকে একটু পার্টি সাজ দিয়ে দেন তো কিন্তু লজ্জায় সে কথা আর বলতে পারলাম না।থাক নিজের বিয়ের সময় তো পারব সাজতে।আজ না হয় নাই গেলাম।আপু চলে গেল পার্লারে।আমি ব্যস্ত হয়ে গেলাম কাজে।
বেলা বারোটায় গোসল করলাম,বাবার দেয়া ঐ ড্রেসটা পড়লাম চোখে হালকা কাজল আর ঠোঁটে লিপস্টিক দিলাম।ঘর থেকে বাহিরে বের হওয়ার পর সামনে পড়লাম বাবার।বাবা আমাকে দেখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল বললো
__মা তোকে আজ খুব সুন্দর লাগছে
__কি বলছো কোন সাজগোজ করলাম না তাতেই বলছো
__মারে তোকে এভাবেই অনেক ভালো লাগছে
__হয়েছে আর পাম দিতে হবে না
__বাবা কি কখনো মেয়েকে পাম দেয় বল
আচ্ছা বুঝেছি এখন বলো রান্না হয়ে গেছে।হুম সব কমপ্লিট।
মেহমান আসা শুরু হয়ে গেছে।দুইটা বেজে গেছে।বরযাত্রী আসবে চারটায়।কিছু লোক খাওয়া দাওয়া করছে।বাবা আমাকে ডেকে বললো
__এশা আসছে
__না তো
__এখনও আসছে না কেন
__সাজা হয়নি হয়তো
একথা বলার পরেও এক ঘণ্টা পার হয়ে গেল।আমার ও টেনশন হলো আসছে না কেন।বাবা আমার এক ভাইকে পাঠালো।ভাইটা এসে বললো ওরা নাই পার্লারে।আমি ফোন দিলাম আপুর নাম্বারে।ফোন বাজে ধরছে না।কিছুই বুঝলাম না।
বাবা টেনশন করছে কি হলো? কোথায় গেল মেয়েটা।
এদিকে বরযাত্রী আসার সময় হয়ে গেল।এখন সবাই টেনশন করছে।আপুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সবাই চিন্তায় পড়ে গেল।
কিছুক্ষণ পর একটা ফোন আসল বাবার ফোনে
__হ্যালো
__হ্যা হ্যা হ্যালো খালু আমি
__আমি কে?
__আমি অনু
__ওহ্ কোথায় তুমি
__কোথায় বলতে পারব না আমাকে বেধে রেখেছে খুব কষ্ট করে আপনার নাম্বারে কল দিলাম ভাগ্যেস মুখস্থ ছিল
__আমার মেয়ে কোথায়
__জী খালু এটা বলতেই
লাইন কেটে গেল...........................................
চলবে
#ভাগ্যের_লিখন#
পর্ব-১
লিখা-আয়েশা
0 Comments