Bangla Love Story (একটি কান্নাহাসির গল্প - পর্ব ০১) Bangla Golpo

Bangla Love Story (একটি কান্নাহাসির গল্প - পর্ব ০১) Bangla Golpo

Are you searching love story in Bangla language you will find here many types of Bangla story like a romantic love story, cute love story, heart touching love story, Islamic love story, Bangla golpo, story, real love story, Bangla Islamic Story, new love story, valobasar golpo, premer golpo, Bangla love story, I hope you are like our collections if you like our collection please connect with us.

Bangla Love Story (একটি কান্নাহাসির গল্প - পর্ব ০১) Bangla Golpo, romantic love story, romantic golpo, cute love story, real love story, status zone bd, bangla romantic love story, heart touching love story
(একটি কান্নাহাসির গল্প - পর্ব ০১)

গল্প : একটি কান্নাহাসির গল্প
পর্ব : ০১
লেখক - রিয়াদ আহম্মদ ভূঁঞা


'স্যার, বিয়ে করবেন আমায়?'
একাদশ শ্রেণীতে পড়ুয়া ছাত্রী তানহার মুখে কথাটি শুনে হতভম্ব হয়ে গেলাম আমি। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে নিলাম কেউ শুনে ফেললো কিনা ওর কথাটি। না, কেউ নেই এদিকে। বললাম,
- 'কি বলছো এসব! মাথা ঠিক আছে কি তোমার?'

তানহা বললো,
- 'দেখুন স্যার, আমি জানি আপনি আমাকে পছন্দ করেন আর হয়তো ভালোও বাসেন। আপনি যে বাসায় এসে পড়ানোর চেয়ে আমাকে কাছ থেকে দেখতে আসেন বেশি সেটা কিন্ত আমি সেই ক্লাস নাইনে থেকেই দেখে আসছি। যাইহোক, আমি অনেক ভেবেছি বিষয়টি নিয়ে। এবার আমি যা ভেবেছি আপনার মনেও যদি তাই থাকে তবে মায়ের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পারেন।'

এটা ঠিক যে তানহাকে আমি পছন্দ করি আর ভালোও বাসি। কিন্তু, ওর পরিবারের যে স্টেটাস তার সাথে কখনোই আমার পরিবারের স্টেটাস যায় না। আর তাই মনের কথা এতদিন মনেই পুষে রেখেছি কখনো মুখ ফুটে বলার সাহস করিনি। কিন্ত তানহা যে এতদিন ধরে বিষয়টি আন্দাজ করে আসছে সেটা শুনে রীতিমতো একটু লজ্জিতই হলাম। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে গিয়ে বললাম,

- 'আমি আসি তাহলে। আজ আর পড়াবো না।'

কথা শুনে তানহাও দাঁড়িয়ে গেলো। বললো,
- 'আপনি কি আমায় এড়িয়ে যাচ্ছেন নাকি আমার ধারণা ভুল? ধারণা যদি ভুল হয়ে থাকে তবে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আর যদি এড়িয়ে গিয়ে থাকেন তাহলে কাল থেকে আর পড়াতে আসবেন না। আসলেও আমি আর পড়বো না।'

কথাগুলো বলে ও রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আগে কখনো এমন মসিবতে পড়িনি আমি। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম। মাথায় আসছে না কোনকিছু। বেরিয়ে এলাম ওদের বাসা থেকে।

তানহার বাবা ছিলেন একজন আমেরিকান প্রবাসী। ময়মনসিংহ শহরে ওদের তিনটি বিশালাকার বিল্ডিং রয়েছে যেগুলোতে আছে কয়েকশো দোকান। মাস শেষে লাখ লাখ টাকা ভাড়া ওঠে। ভাড়া ওঠে ফ্ল্যাটেরও। ওকে পড়ানোর জন্য ওর বাবাই আমাকে ঠিক করেছিলেন ও যখন সেই ক্লাস এইটে পড়তো তখন। উনি প্রবাসেই মারা যান গত বছর একটি রোড এক্সিডেন্টে। বিশ্বস্ত ও পড়ানোর মান ভালো হওয়ায় তানহার জন্য আর কোন গৃহশিক্ষক দেখেন নি তানহার মা। আর তাই তানহাকে পছন্দ করলেও মুখ ফুটে ওকে কোনদিন ভালোলাগার কথাটি বলার সাহস করিনি। ভয় ছিলো, যদি ও ভুল বুঝে। যদি ও ওর মাকে সব বলে দেয়! কি হবে তখন!

বাসায় শুয়ে আছি একা। রুমমেট বাইরে গেছে। এমন সময় কল আসলো তানহার মায়ের নম্বর থেকে। কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম আমি৷ ভাবলাম, 'এরমধ্যে তানহা ওর মাকে সবকিছু বলে দেয়নি তো আবার!' এসব ভাবতে ভাবতেই ফোনটা রিসিভ করলাম।

আমি,
- 'আসসালামু আলাইকুম।'

ওপাশ থেকে,
- 'ওয়ালাইকুমুসসালাম। রিয়াদ, আজ কি তুমি তাড়াতাড়িই চলে গিয়েছিলে নাকি?'

তানহার মা শুরু থেকেই আমাকে তুমি করে বলতেন। বললাম,
- 'জ্বী আন্টি, একটু তাড়াতাড়িই চলে এসেছিলাম আজ। কোন দরকার কি?'

আন্টি,
- 'না, তেমন কিছু না অবশ্য। তোমার জন্য দুটো টি শার্ট ও একটি পাঞ্জাবি এনেছিলাম। কিন্তু বাসায় এসে তোমায় পেলাম না। যাক অসুবিধে নেই। কাল মনে করে নিয়ে যেও কেমন!'

আমি,
- 'আচ্ছা আন্টি।'

ওপাশ থেকে লাইনটা কেটে গেলো। হাফ ছেড়ে যেন বাঁচলাম আমি। গত তিনবছরে আরো বহুবার এভাবে নানান জিনিস গিফট করেছেন উনি। এমনকি এই যে হাতের মোবাইলটা এটাও। ডাটা ওন করলাম ফেসবুকে ঢুকবো বলে। অমনি টিং টং করে কয়েকটি মেসেজ চলে আসলে। তানহা ছবি পাঠিয়েছে! না, ওর ছবি নয় কাপড়গুলোর ছবি। সাথে লিখেছে, 'আগামী পরশু এই পাঞ্জাবীটা পরে পড়াতে আসবেন। এটা খুব পছন্দ হয়েছে আমার। আর আমি আশা করব আপনি কাল অবশ্যই আসছেন। কি, আসছেন তো?'

রিপ্লাই দিলাম,
- 'দেখো, আমি তোমায় পছন্দ করি আর ভালোবাসি এটা যেমন সত্যি ঠিক তদ্রূপ এটাও সত্যি যে, আমার প্রতি থাকা তোমার মায়ের আস্থা, ভরসা ও বিশ্বাসকে আমি আহত করতে পারবো না। কাজেই, আসবো ঠিকই পড়ানোর জন্য। কিন্ত এই বিষয়টির ইতি এখানেই টেনে ফেলতে চাই আমি।'

তানহা,
- 'তারমানে আপনি মাকে আমাদের বিষয়ে বলতে পারবেন না তাই তো?'

আমি,
- 'হ্যা, ঠিক তাই। বলতে পারবো না।'

তানহা,
- 'আচ্ছা ঠিক আছে, বলতে হবেনা। বাই।'

এই বলে ও চলে গেলো চ্যাট থেকে। আমিও আর কোন মেসেজ দিলাম না। পরদিন যথাসময়ে পৌঁছে গেলাম পড়ানোর জন্য৷ আমার উপস্থিতি টের পেয়ে আন্টি রুম থেকে বেরিয়ে এলেন। সামনাসামনি আমরা। উনাকে সালাম দিলাম আমি,

- 'আসসালামু আলাইকুম।'

আন্টি,
- 'ওয়ালাইকুমুসসালাম। কেমন আছো রিয়াদ?'

আমি,
- 'আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো। আপনি?'

আন্টি,
- 'হুমম, আলহামদুলিল্লাহ্। লাঞ্চ করেছো?'

আমি,
- 'জ্বী, করেছি। আপনি?'

আন্টি,
- 'হ্যা করেছি। তুমি রিডিং রুমে যাও তাহলে। সালমাকে বলে দিচ্ছি চা দিতে। তানহা আসছে কিছুক্ষণের মধ্যে।'

আমি,
- 'আচ্ছা ঠিক আছে।'

চলে এলাম রিডিং রুমে। এসে দেখি ছোট্ট নবাব চেয়ারে উঠে বসে আছে। তায়েফ মাহমুদ। তানহার ছোট ভাই। সবেমাত্র কেজি ওয়ানে পড়ছে ও। আদর করে ওকে আমি নবাব বলেই ডাকি। আমাকে দেখলেই চকোলেট চকোলেট বলে পাগল হয়ে ওঠে। আমিও প্রতিদিন ওর জন্য চকোলেট নিয়ে আসি। ওকে চকোলেট এনে দিতে আমার যে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায় সে বিষয়টি আন্টির অজানা নয় আর তাই হয়তো তিনি আমাকে প্রতি মাসের দুই-তিন তারিখেই টাকাগুলো দিয়ে দেন। এমাউন্টটা এমন যা কিনা চার-পাঁচটি টিউশনি করালেও হয়তো এতটাকা পাওয়া যেতো না! উনি আমায় এত টাকা দিলেও কখনো জিজ্ঞেস করিনি কেন এত টাকা দেন। নবাবের হাতে চকোলেট ধরিয়ে দিতেই ও চলে যায় রুম থেকে। কিছুক্ষণ পরই কানে ভেসে আসে,

- 'ম্যা আই কাম ইন!'

আমি,
- 'ইয়েস কাম ইন!'

চোখগুলো ফুলে আছে ওর। বুঝতে বাকি রইলো না যে রাতে অঝোরে বৃষ্টি ঝরেছে বহুক্ষণ। জিজ্ঞেস করলাম,

- 'জ্বর উঠেছে কি?'

কোন জবাব দিলো না ও। আবারো বললাম,
- 'তুমি কি ঠিক আছো?'

আবারো কোন জবাব দিলো না। পড়া বের করে বলে উঠলো,
- 'নিন, পড়ান!'

আমি বললাম,
- 'দেখো, তুমি যা করছো সেটা কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। এটি কখনোই হবার নয়।'

এমন সময় আন্টির গলার আওয়াজ ভেসে আসলো।
- 'আসতে পারি?'

আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,
- 'জ্বী, আসুন!'

আন্টির মুখে মুচকি হাসি আর হাতে দুটো শপিং ব্যাগ। এগিয়ে এসে টেবিলের উপর ব্যাগগুলো রেখে তা থেকে প্রথমে টি-শার্টগুলো বের করলেন। আমায় দেখিয়ে বললেন,

- 'দেখো তো পছন্দ হয়েছে কিনা?'

আমি,
- 'এখন এসবের কি প্রয়োজন ছিলো আবার। অযথাই খরচ করতে গেলেন।'

আন্টি এবার মুচকি হেসে বললেন,
- 'কে বলেছে আমি অযথাই খরচ করতে গিয়েছি? এগুলো আমি নয়, এগুলো পাঠিয়েছে আমার ছোটবোন তোমার সারা আন্টি। গতকাল মার্কেটে দেখা করতে বলেছিলো আমায়। দেখো তো পাঞ্জাবীটা পছন্দ হয় কিনা! আর শোন, সারা বলেছে আগামী শুক্রবার এই পাঞ্জাবীটা পরে তুমি যেন ওদের বাসায় যাও। জুমার পর তোমার দাওয়াত সেখানে। বুঝেছো?'

আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
- 'কি বলছেন এসব! আর তাছাড়া আমি তো সারা আন্টিদের বাসায় যাইনি কখনো। চিনবো কি করে?'

আন্টি,
- 'সে আমি ব্যবস্থা করে দিবনে। সেসব তোমায় ভাবতে হবে না। আমি আসি এবার। তোমরা কন্টিনিউ করো।'

আন্টি চলে গেলেন রুম থেকে। এদিকে মুহুর্তেই কপালে দুশ্চিন্তার ভাজ পড়ে গেলো তানহার। ও তড়িঘড়ি করে ফোন হাতে নিলো। বললাম,

- 'কি ব্যাপার, কি হয়েছে?'

তানহা,
- 'প্লিজ আমাকে একটু সময় দিন।'

এই বলে ও কাউকে যেন কল করলো। ওপাশ থেকে রিসিভ করতেই তানহা বলে উঠলো,
- 'রুবি, চ্যাটে আয় তো একটু। এক্ষুনি আয়।'

কিছুই বুঝতে পারছিলাম না আমি। কিন্তু এমুহূর্তে চুপ করে থাকা ছাড়াও আর কোন উপায় ছিলো না আমার। তানহা চ্যাট করতে লাগলো।

মিনিট পাঁচেক পর ও ফোনটা রেখে দিলো। বললাম,
- 'কি হয়েছে? আর রুবির সাথে কিসের কথা বললে এখন?'

তানহা,
- 'আন্টি ঠিক করেছে রুবিকে আপনার কাছে পড়াবে বলে। ও আমার সাথেই পড়ে একই কলেজে। ও আমার সব নোটস দেখতো। অনেক হেল্প নিতো আমার থেকে। আপনার দেয়া সব শীটের ফটোকপি করে নিতো ও। এতদিন যা ভয় পাচ্ছিলাম হয়ত তাই হতে চলেছে। যাইহোক, আপনি পড়ান। আপনার তো এসবে কোন অসুবিধা নেই। পড়ান!'

আমি বুঝতে পারছিলাম না আসলে ঠিক কি হতে চলেছে। তানহা কিছুটা বুঝতে পারলেও ও বিস্তারিত আমায় বলছিলো না। হয়ত ও কিছু আড়াল করছিলো আমার থেকে। তবে, ওর চেহারা দেখে এটা আন্দাজ করতে পারছিলাম যে, যা হতে চলেছে তা মোটেও ভালো কিছু বয়ে আনবে না।

আজ মঙ্গলবার। তানহা বলেছিলো পরশুদিন মানে আগামীকাল যেনো পাঞ্জাবীটা পরে পড়াতে আসি। ও কি তাহলে কাল জানতে পারেনি যে কাপড়গুলো ওর মা নয় বরং ওর আন্টি গিফট করেছে। আজ আবার আন্টি সাফ সাফ বলে দিলেন শুক্রবার যেন পাঞ্জাবীটা পরে সারা আন্টির বাসায় যাই। তাহলে, তানহা যে বলেছিলো এটা পরে ওকে পড়াতে আসতে তার কি হবে? আর কাল যদি পাঞ্জাবি পরে আসি তাতে যদি আন্টি কিছু মনে করেন তো!

না, আমার মাথায় এখন আর কাজ করছেনা কিছু। এসব ভাবতে ভাবতে কোথাও যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম আমি। তানহার কথা শুনে হুঁশ ফিরলো আমার। ও বললো,

- 'কি হলো! পড়াবেন না?'

আমি,
- 'হ্যা হ্যা, অবশ্যই পড়াবো। দাও বই দাও!'

আমি বই নিয়ে পাতা উল্টাচ্ছি আর ও অপলক তাকিয়ে আছে আমার দিকে। কি হতে কি হয়ে গেলো এই দুদিনে আসলে বুঝতেই পারিনি। ভালোই তো চলছিলো এতদিন। এখন না পারছি ওকে ভালোভাবে পড়াতে আর না পারছি পড়ানো ছেড়ে দিতে। হুট করেই তো আর টিউশনের ব্যবস্থা করা যায় না। আর তাছাড়া, তানহাকে পড়ানো ছেড়ে দিতে হলে এর যৌক্তিক কোন রিজন অবশ্যই আন্টিকে জানাতে হবে। কি করবো আমি সেসব ভেবেই দিশেহারা হয়ে যাচ্ছি। এমন সময় তানহা বলে উঠলো,

- 'শুনুন! আমি যে আপনাকে বলেছিলাম পাঞ্জাবি পরে পড়াতে আসতে সেটা কাল আসতে হবেনা বরং শনিবারেই আইসেন পাঞ্জাবি পরে। আর শুক্রবারে যান রুবিদের বাসায়। আগে গিয়ে দেখুন আন্টি কি বলেন। আর হ্যা, রুবি একটি ছদ্মনাম নাম দিয়ে ফেইক আইডি খুলে সেটা দিয়ে আপনার সাথে এড আছে। নাম, 'দূর আকাশের চাঁদ', আপনার নিকনিক আবার চাঁদ কিনা। এবার বুঝতে পারছি সবই ওর প্ল্যান মতোই হচ্ছে।'

তানহা কথাগুলো বলছিলো আর যেন রাগেমেগে একেবারে ফেটে পড়ছিলো। বললাম,

- 'সবই ওর প্ল্যান মতোই হচ্ছে মানে? কিসের প্ল্যান? আর আমি যে মনে মনে এখন পাঞ্জাবির বিষয়টা নিয়ে ভাবছিলাম সেটা তুমি টের পেলে কি করে?'

তানহা,
- 'আপনাকে এতকিছু জানতে হবেনা। পড়ান!'

------চলবে-----

Part 2

Post a Comment

0 Comments