(সুখের সন্ধানে - পর্বঃ ২) |
সুখের সন্ধানে
Tahmi Chowdhury
পর্বঃ ২
নুসরাতের ১হাত সামনে গাড়িটা এসে ব্রেক কষল…
মরতে মরতে যেন বেঁচে গেলো সে……
বন্ধ চোখজোড়া পিটপিট করে মেলে ধরলো,,,
সামনে দাঁড়ানো স্বাস্থ্যবান যুবক বয়সী লোকটাকে দেখে কিছুটা পিছিয়ে গেলো নুসরাত।
__আপনি কি গাড়ির নিচে পড়ে মরতে যাচ্ছিলেন……
কর্কশ গলায় লোকটা প্রশ্ন করলো নুসরাতকে……
__ইয়ে মানে,,,দুঃখিত!
আমি বেখেয়াল বশত …
__রাস্তায় চলাচলের সময় বেখেয়ালে চলাচল না করে চোখ কান হুশ সব খোলা রেখে চলবেন……
এই বলে লোকটা হনহন করে গাড়িতে উঠে গেলো।
-হে আল্লাহ আজ আবার নতুন জীবন পেলাম।
কি বলে তোমার শুকরিয়া জানাবো মাবুদ,,,যত শোকর করি কম হবে যাবে।
"আলহামদুলিল্লাহ আ'লা ক্বুল্লি হাল"♥
রাস্তার পাশ দিয়ে আবার নীরবে হাটা ধরলো নুসরাত……
:
এতো রেগে আছিস কেন ইমন……কি হয়েছে বাবা তোর?
ছেলের কুঁচকানো ভ্রু যোগল দেখেই শাহানারা বেগম বুঝে ফেললেন ইমন যে প্রচণ্ড রেগে আছে।
__আগে আমায় এক গ্লাস পানি দাও মা।
টেবিল থেকে গ্লাস এনে ছেলের হাতে তুলে দিয়ে নিজের আঁচল দিয়ে মাথার ঘামগুলো মুছে দিতে লাগলেন……
__বল বাবা কি হয়েছে?
__আর বল না মা! রাস্তায় একটা এক্সিডেন্ট হতে হতে বেঁচে গেছে।
একটা মেয়ে হুট করেই রাস্তার মাঝে চলে আসছিল।
__কি বলছিস বাবা! তোর কিছু হয় নি তো?
__না মা কিছু হয় নি। আর জানো মা মেয়েটি কি অবস্থাহ ছিল,,,এইরকম মেয়ে আজকাল খুব কমই দেখা যায়……
ছেলের উজ্জ্বল চেহারার দিকে চেয়ে ভ্রু কুঁচকালেন শাহানারা।
__মেয়েটি দেখতে কেমন ছিল রে?
__মেয়েটি দেখতে কেমন ছিল সেটা জানিনা মা!
আপাদমস্তক কালো কাপড়ে ঢাকা ছিল,,,আর এই কড়া রোদের মধ্যেও পূর্ণ পর্দার সহিত ছিল……
চিন্তাতীত নয়নে ছেলের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবলেন শাহানারা বেগম……
__কি হল মা! কথা বলছ না যে?
__না বাবা কিছুনা! তুই এইসব মেয়েদের জানিস না বাবা! ওরা খুব ভয়ংকর হয়।
__কেমন ভয়ংকর মা!
__এই ধর জঙ্গি টঙ্গি,,,কারণ এরাই এইভাবে চলাফেরা করে……
__না মা! এটা ঠিক না! জঙ্গি হতে যাবে কেন? এই পোশাক তো মুসলিম মেয়েদের পরিচয়! মা আমি মনে করি এই পোশাক প্রত্যেক মুসলিম মেয়েদের গায়ে জড়ানো উচিত। ইনফ্যাক্ট তোমার ও আমার বোনদের ও…
__কি বলছিস এসব বাবা!
আজ কি হলো হুট করে তর?
__কিছুনা মা! আমার ভাল্লাগছেনা,,,আমি আমার রুমে যাচ্ছি।
ইমনের যাওয়ার পানে অবাক হয়ে চেয়ে রইলেন শাহানারা……
:
আম্মা দুইডা টেহা সাহায্য দেন না!
নুসরাতের সামনে হাত পেতে রয়েছেন এক বৃদ্ধা মহিলা……
__আমার কাছে তো……
বলতে বলতে থেমে গেলো নুসরাত,,,,
ব্যগটা হাতে নিয়ে ভালো করে হাতরাতে লাগলো,,,
-ইশ এইখানেই তো রেখেছিলাম।
__নাই আম্মা! আচ্ছা লাগবোনে……
- না না চাচী দাঁড়ান!
পেয়েছি……
ব্যাগ থেকে ১০০টাকার দুটো নোট বের করে মহিলার হাতে ধরিয়ে দিলো নুসরাত।
-এতো টেহা?
__নিয়ে নিন চাচী! ভালো মন্দ কিছু খাইয়েন।
_আল্লাহ তোমার ভালো করুক আম্মা!
মুচকি হাসলো নুসরাত।
মহিলাটি লাঠিতে ভর দিয়ে আস্তে আস্তে চলে যেতে লাগলো সেই সাথে নুসরাতের চোখ দিয়েও অশ্রুগুলা অঝরে ঝরে যেতে লাগলো।
-আল্লাহ তো এর থেকেও আমাকে ভালো রেখেছেন আলহামদুলিল্লাহ।
হে আল্লাহ এই গরীদের তুমি সাহায্য করো মাবুদ।
ঘরে ফিরে টিউশনির টাকাগুলো হিসাব করতে লাগলো নুসরাত……
"কলেজের বেতন ৩০০০ হাজার,,,রেজিস্টার ফি ৫০০০ গাড়ি ভারা ২০০০,,
মোট দশ হাজার।
আছে মাত্র ২০০০।
হায় আল্লাহ! সামনের মাসেই আসছে,,,এতো টাকা কোথায় থেকে যোগাড় হবে……
-নুসরাত মা এসেছিস!
-হ্যাঁ মা বলো!
শাহিনা বেগম মেয়ের ঘরে ঢুকে বললেন,,,
__মা তর কাছে ৫০০ টাকা আছে। তর ভাই আমিনুল খুঁজছে,, ওর মাদ্রাসায় না কি কি দরকার?
__মা ওদের বাবা এতো দিচ্ছে,,,ওদের আরো লাগে টাকা।
-ছেলে মানুষ মা! আর ওরা বাইরে বাইরে থাকতে ওদের তো হাতখরচ কিছু লাগে।
-হুম,,,
হাতের চারটা ৫০০ টাকার নোট থেকে একটা নোট মায়ের হাতে ধরিয়ে দিলো নুসরাত।
-আপি আপি?
নুসরাতে ছোট ভাই মোহাম্মদ নুসরাতের কাছে ছোটে এলো……
__কি হয়েছে ভাইয়া বল?
__আপি এই নেও,,,২০০ টাকা।
__কোথায় পেলে এই ২০০ টাকা।
__আজ না আমাদের মাদ্রাসা থেকে আমি এক বাড়ি গিয়েছিলাম,,,উনারা আমাকে দিয়ে দোয়া করিয়েছেন আর তারপর এই ২০০ টাকা দিয়েছেন।
__তাহলে ভাইয়া তোমার টাকা নেওয়া তো ঠিক হয় নি……
__আপি আমি মানা করেছিলাম,,,ওরা তারপরও জোর করে আমায় দিয়ে দিছে।
__আচ্ছা তাহলে এই টাকাটা কোন গরীবকে দান করে দিও।
__কি বলছিস নুসরাত। আমরাই ভালো মতো চলতে পারছি না আর তুই বলছিস দান করে দিতে হুম।
দে তো মোহাম্মদ আমার কাছে টাকাটা দে……
মায়ের হাতে টাকাটা বাড়িয়ে দিতেই পরম আদরে ভাইয়ের হাত সরিয়ে দিলো নুসরাত……
মেয়ের কান্ডে রাগান্বিত চোখে তাকালেন শাহিনা বেগম……
মুচকি হেসে বিনয়ের সহিত মায়ের হাত জড়িয়ে ধরে বিছানায় বসালো মাকে……
__শুনো মা তোমাকে কয়েকটা কথা বলি……
সূরা বাকারাহ এর
২৪৫নং আয়াতের বলা হয়েছে:
"(তোমাদের মধ্য থেকে )কে (এমন) হবে যে
আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেবে (যে কেউই আল্লাহ কে ঋণ দেবে সে যেন জেনে রাখে )আল্লাহ তায়ালা তা (ঋণের সে অংক) তার জন্য বহুগুণে বাড়িয়ে দেবেন;আল্লাহ তায়ালা কাউকে ধনী আবার কাউকে গরীব করেন (আর ) তোমাদের (ধনী গরীব) সবাইকে একদিন তার কাছে ফিরিয়ে নেয়া হবে।"
নির্মম বাস্তবতা হল, এখনই আমি যদি মারা যাই তাইলে আমার জমানো টাকা সবাই ভাগ করে নেবে।আমার কাছের আপনজনেরাই নিবে। আমাদের কি উচিত না যে আমরা কিছু সম্পদ একটা সুরক্ষিত স্থানে অগ্রিমভাবে পাঠিয়ে দিই যা আমি ভোগ করতে পারব অনন্তকাল?
এখানে দানের পরিমাণটা মূখ্য নয়, আল্লাহর
সন্তুষ্টি ই আসল।
আর দান-খয়রাতে আল্লাহ অনেক খুশি হন মা……
জানো মা!
-----দানের ফজিলত-----
#নবীজি সা. ইরশাদ করেন, কোন ব্যক্তি যদি হালাল কামাই থেকে সঠিক খাতে একটি খেজুরও দান করে, তবে আল্লাহ তা’আলা সেই সামান্য দানকে এমনভাবে প্রতিপালন করেন যেমন তোমাদের কেউ তার উট প্রতিপালন করে থাকে: অতঃপর সেটি বাড়তে বাড়তে উহুদ পাহাড় পরিমাণ পৌঁছে যায়।
[বুখারি:২/৫১১,মুসলিম:২/৭০২]।
আমাদের একটি বিষয় স্মরণ রাখতে হবে, সাধারণ দান-সদকা ও যাকাত-ফেৎরার মূল হকদার গরীব মিসকিন অসহায় এতিম যাদের নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, সদকা (যাকাত) এর
হকদার ফকির-মিসকিনরা..। [সূরা তাওবা/৬০]
মা আমরা তো না খেয়ে নেই আল্লাহ তো আমাদের রিজিক দান করেছেন আলহামদুলিল্লাহ।
আর মা আমাদের থেকে কতো গরীব অনাহারে মরছে আজ যদি আমি একটা টাকার বিনিময়েও ওদের সাহায্য করতে পারি আল্লাহ কতোটা খুশি হবেন বুঝতে পারছো মা!
আমাদের তো উচিত আল্লাহর খুশির জন্য সব কিছু করা,,,মা!
এই দুনিয়াতে আমরা চিরকাল থাকবো না,,,
আমাদের মরণ হবে আসলে সকল প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।
এর আগে আমাদের আমল নামা ভারী করতে হবে নেক কাজ দ্বারা।
মা! তুমি এখনো ও কি নারাজ আছো?
…মেয়ের কপালে চুমো দিয়ে
ছেলেকে ও কাছে টেনে নিলেন শাহিনা বেগম……
__বাবা তুমি এই টাকাটা নিয়ে তোমার মাদ্রাসায় তোমার সেই বন্ধুকে দিয়ে দিও। যার কথা কাল বলছিলে না,,,,
_আহমদ না?
__হুম সেই,,, বলেছিলে না সে তার মাকে ঔষধ কিনে দিতে পারছে না টাকার অভাবে,,,
তাকে এই টাকাটা আর আমার কাছে কিছু আছে ওগুলো নিয়ে দিয়ে দিও……
__ঠিক আছে আম্মু!
__আমার কাছেও আছে এই নে?
__আপু তোমার কলেজের ……
__ও তোকে ভাবতে হবে না ভাই! আল্লাহ সব সহজ করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।
__"জাযাকাল্লাহ খাইরান আপি"
ছোট মোহাম্মদ বোন ও মাকে জড়িয়ে ধরে প্রাণবন্ত হাসি হাসলো……
0 Comments