Romantic Love Story (সাঁঝের প্রেম - পর্ব ০১) New Love Story
Are you searching love story in Bangla language you will find here many types of Bangla story like a romantic love story, cute love story, heart touching love story, Islamic love story, Bangla golpo, story, real love story, Bangla Islamic Story, new love story, valobasar golpo, premer golpo, Bangla love story, I hope you are like our collections if you like our collection please connect with us.
সাঁঝের_প্রেম
Part_1
Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
-নিশি আপু আমাকে একটু এই ডকুমেন্টস গুলো বুঝিয়ে দাও তো। একটু পর বস রাউন্ডে আসলে সাংঘাতিক ভাবে বকবে। (নিশির কলিগ)
-আসছি দিয়া। (নিজের ডেস্ক ছেড়ে নিশি দিয়ার সামনে গেলো)
-নিশি আপু এইত পেপারস গুলো কিছুই বুঝছিনা।
-দেখো আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।
নিশি দিয়ার সমস্যাগুলো বুঝিয়ে দিচ্ছিলো ঠিক সেই সময় নিশির বস আসে রাউন্ডে। সবাই দাঁড়িয়ে গুড ইভিনিং জানায়। নিশি বসকে গুড ইভিনিং বলার পর বস নিশিকে বলে,
-মিস নিশি একবার আমার কেবিনে আসুন।
-ওকে স্যার।
নিশি বসের পেছন পেছন কেবিনে যায়। কেবিনে গিয়ে নিশি দাড়িয়ে ছিলো। তখন বস নিশিকে বসতে বলে আর নিশিকে বলে,
-মিস নিশি আপনার কাজ আর পার্ফমেন্স দেখে আমি মুগ্ধ। আপনি আমার কোম্পানিতে আসার পর সবাই এক্টিভ হয়ে গেছে। এই কোম্পানিতে আপনার অবদান সত্যিই অনস্বীকার্য। আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
-কি স্যার?
-আপনার চিটাগং পোস্টিং হয়ে গেছে। পাঁচদিনের মধ্যে আপনি চিটাগং চলে যাবেন। এই নিন ট্রান্সফার সার্টিফিকেট। (নিশির দিকে সার্টিফিকেট এগিয়ে দিয়ে বস)
চিটাগং এর কথা শুনে নিশি কেঁপে উঠলো। চোখ বড় বড় করে তাঁকিয়ে আছে নিশি বসের দিকে।
-Are you okay miss Nishi? (তুড়ি মেরে বস)
-স্যার চিটাগং ছাড়া আপনি আমায় যেই জেলায় দিবেন আমি যেতে রাজি। প্লিজ স্যার পোস্টিং টা ক্যান্সেল করুন প্লিজ। (নিশির চোখ দিয়ে পানি পরছে)
-কি হয়েছে নিশি?
-কিছুনা স্যার বাট আমি চিটাগং যেতে পারবনা। (নিশি দাঁড়িয়ে যায়)
-নিশি আপনি কার সাথে কথা বলছেন জানেন? আমার মুখের উপর কেউ কথা বলেনা। হয় চিটাগং যাবেন নয় চাকরি ছেড়ে দিবেন। Now choice is your. আজকে ডিসিশন নিন এরপর কাল আমায় জানাবেন। আসতে পারেন এখন।
নিশি বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে। নিজের ডেস্কে বসে নিশি কাঁদছে আর কাজ করছে। কিছুক্ষণ পর অফিস ছুটি হয়ে যায়। হাতে বেনিটি ব্যাগ ঝুলিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটছে নিশি। থ্রি পিসের ওড়না মাটিতে গড়াচ্ছে আর স্লিপার পরে ফুটপাত দিয়ে হাঁটছে নিশি। যাওয়ার সময় বাসস্ট্যান্ডের পাশে দাঁড়িয়ে যায় নিশি। এইটাই সেই বাস স্ট্যান্ড যেটাকে নিশির জীবনের টার্নিং পয়েন্ট বলা চলে। কতক্ষণ বাসস্ট্যান্ডের বাসস্টপের দিকে তাঁকিয়ে থাকে ও। দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারো চলে আসে সেখান থেকে। অনেকটা দূরে আসার পর নিশি রিক্সা নিয়ে বাসায় আসে। আসার সময় আকাশ কুসুম ভেবে নিজের মাথায় সেগুলো জটলা পাকায় নিশি। চাকরিটা তো ওর ছেড়ে দিলে চলবেনা। চাকরি ছেড়ে দিলে বোনের কলেজ খরচ কিভাবে দিবে ও? আম্মুকে দেখবে কে? নিশি সিদ্ধান্ত নেয় ও চাকরিটা করবে আর চিটাগং চলে যাবে ও। চোখের পানি মুছে নিশি দরজায় কলিংবেল বাজায়। তুর্না (নিশির ছোট বোন) এসে দরজা খোলে।
-আপু এসেছো? কখন থেকে ওয়েট করছি তোমার জন্য! (তুর্না)
-তুই পড়তে বসেছিস তো? (জুতা হাতে নিয়ে নিশি ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো)
-হ্যা আপু বসেছি।
-আম্মু কোথায়?
-ঘরে।
-আচ্ছা তুই গিয়ে পড়।
নিশি ব্যাগ ডায়নিং এর উপর ফেলে আম্মুর সাথে দেখা করতে যায়। আম্মু তখন বসে বসে কুরআন পড়ছিলেন। নিশিকে দেখে পড়া থামিয়ে বললেন,
-তুই কখন এলি নিশু মা?
-এইত মাত্রই আম্মু। তুমি ওষুধ খেয়েছো?
-হ্যা। যা জামাকাপড় পালটে আয়। চা করে দেই আমি তোকে আর তুর্নাকে।
-না মা তোমায় উঠতে হবেনা পড়া থেকে৷ আমি করছি।
-সারাদিন অফিস করে এলি না তুই? তুই যা আমি আসছি।
নিশি ওর ঘরে এসে চেঞ্জ করে তুর্নার পাশে বসে। তুর্না অনেক ব্রিলিয়ান্ট ঠিক নিশির মতো। তুর্নার মুখের দিকে তাঁকিয়ে থাকে নিশি। ঠিক তখনি আম্মু এসে দুইবোনকে চা দিয়ে যায়। আম্মু কথায় কথায় নিশিকে বলল,
-আর কত আমাদের টানবি নিশু? এইবার কি নিজের কথা ভাববি না? (নিশির মাথায় হাত বুলিয়ে আম্মু)
-তিন বছর আগে সেই ভাবনাগুলো আমায় ছেড়ে চলে গেছে আম্মু। আমি সত্যিই আর ভাববো না নিজেকে নিয়ে। তোমাদের জন্যই বাঁচব আমি। (হাসি দিয়ে নিশু)
-মাহবুব ভাইয়া কি বিয়ে করেছে আপু? (তুর্না)
-তুর্না??? কেন নিচ্ছিস ওর নাম আমার সামনে? (ধমক দিয়ে নিশু)
-স্যরি আপু। তোমার জীবনটা আমরাই নষ্ট করে দিলাম। তোমার এই জীবনের জন্য আজ দায়ী আমরাই।
-আহ তুর্না কেনো এমন কথা বলছিস তুই? তোরাই আমার সব। আব্বু চলে যাওয়ার পর এখন তোরাই আমার সব। (তুর্নাকে জড়িয়ে ধরে নিশু)
-আই লাভ ইউ আপু।
-যাইহোক আম্মু একটা ইম্পর্টেন্ট কথা বলছি। আমার চিটাগং পোস্টিং হয়ে গেছে। সেখানে যেতেই হবে আমায় নয়ত চাকরিটা ছেড়ে দিতে হবে। (নিশি)
-কি বলছিস কি? চিটাগং যাবি তুই? (অবাক হয়ে আম্মু)
-হ্যা আম্মু যেতেই হবে। নয়ত আমার চাকরিটা চলে যাবে। আর এই চাকরিটা আমার জন্য ভীষণ ইম্পর্টেন্ট।
-তাহলে আপু আমরা কি ঢাকা থাকব?
-হ্যা৷ তুই ইন্টার শেষ করলে তোদের নিয়ে যাব আমি।
-তোমায় ছাড়া থাকব কি করে আপু?
-কয়েকটা মাসেরই তো ব্যাপার বোন। ঠিক হয়ে যাবে সব।
-হুম।
রাতে ডিনার করে নিশু আর তুর্না শুয়ে পরে। নিশু পাশ ফিরে শুয়ে ভাবছে অতীতের কথা। পাঁচটা বছরে ওর জীবনটাই পালটে গেলো। নিশু শুয়ে বিছানা খামছে ধরে নিঃশব্দে কাঁদছে আর মাহবুবের মুখটা বারবার মুখের সামনে ভেসে উঠছে।
"পাঁচ বছর আগে"
সকাল আটটায় ভার্সিটির বাসের জন্য ওয়েট করছে নিশি। ঘড়ি দেখছে বারবার। লং ড্রেস আর চুরিদার পরে রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে নিশি। কাঁধে ব্যাগ ঝুলানো, ঠোঁটে লিপস্টিক আর চোখে কাজল। গায়ের রঙ উজ্জ্বল আর ছিপছিপে গড়ন। সবার নজর নিশির দিকে কিন্তু নিশির কেয়ার করার সময় নেই। একটা পাবলিক ভার্সিটির বোটানিক্যাল ডিপার্টমেন্ট এ পড়ছে নিশি। ঠিক ৮ঃ১০ মিনিটে একজন ভিক্ষুক এসে দাঁড়ালো পাশে দাঁড়ানো ছেলেটির দিকে। ছেলেটির অফিস বাস এসে গেছে তাই সে তাড়াহুড়ো করে মানিব্যাগটা বের করে দশটাকা দিয়ে বাসে উঠে যায়। নিশির চোখ যায় নিচের দিকে। একটা আইডি কার্ড পরা নিচে। নিশি দৌড়ে সেইটা হাতে নেয় আর লোকটাকে দিতে গিয়ে দেখে বাস ছেড়ে চলে গেছে। বাসে লিখা "পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড"। আর আইডি কার্ড দেখে নিশি বুঝতে পারে উনি ব্যাংকে চাকরি করেন আর ওনার নাম মাহবুব আহমেদ। নিশির বাস ও চলে আসে। তাই নিশি ভাবে কার্ডটা নিয়ে যাই আর পরে আসার সময় দিয়ে আসব। নিশি আইডি কার্ডটা নিয়েই ভার্সিটিতে যায়। বিকেলে ভার্সিটি থেকে ফেরার সময় নিশি পদ্মা ব্যাংকে যায়। সেখানে আইডি কার্ডটা দেখানোর পর ম্যানেজার মাহবুবকে ডেকে দেয়।
-এক্সকিউজমি ভাইয়া আপনার আইডি কার্ডটা আপনি ফেলে এসেছিলেন বাসস্ট্যান্ডে ভিক্ষুককে টাকা দিতে গিয়ে। (কার্ডটা এগিয়ে দিয়ে নিশু)
-ধন্যবাদ তোমায় আপু। এ কার্ডটা খুব ইম্পর্টেন্ট আমার জন্য। (কার্ডটা হাতে নিয়ে মাহবুব)
-ওকে ভাইয়া। আসি।
-শুনো একটু?
-জ্বি বলুন।
-কিছুনা বাট এগেইন থ্যাংকস।
নিশু সেখান থেকে হেসে চলে আসে। বাসায় আসার পর আব্বুর বকুনি খেতে হয় অনেক দেরি হওয়ার জন্য। কিন্তু নিশি সামলে নেয়।
-নিশি ঘুমিয়ে গেছিস? (আম্মু)
-না আম্মু। বলো। (চোখের জল মুছে কল্পনা থেকে বেরিয়ে নিশি উঠে বসে)
-মা একটা কথা রাখবি আমার?
-কি আম্মু?
-তুর্নার সামনে বলতে পারিনি। এখন বলছি বিয়ে করে নে মা। এভাবে আর থাকিস না। মাহবুবের সাথে আমি কথা বলি? জিজ্ঞেস করি ও বিয়ে করেছে কি না!
-মেরে ফেলতে চাও তুমি আম্মু আমায়? এতটা পচে গেছি আমি তোমার কাছে? কোনমুখে কথা বলবে ওর সাথে? ছোট হয়ে যাব না আমি? (চোখের পানি মুছে নিশু)
-প্রতিদিন যখন তোর ঘরটা গুছাই সকালে দেখি বালিশটা ভেজা। তোর কষ্ট কি বুঝিনা আমি মা?
-না মা বুঝো না। বুঝলে এ কথা বলতে পারতে না! (মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে নিশু)
-কাঁদিস না নিশু মা, কাঁদিস না। (মা ও কাঁদছে)
চলবে
0 Comments