(সুখের সন্ধানে - পর্ব-৪) |
সুখের সন্ধানে
Tahmi Chowdhury
পর্ব-৪
দরজার কাছে গিয়ে ইমন আবার পেছনে ফিরে ডাক দিলো মাকে……
__যাচ্ছি মা!
এতোক্ষণে হুশ এলো শাহানারা বেগমের,,,
ছেলের দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে জবাব দিলেন তিনি,,
-সাবধানে জাস!
ছেলেকে বিদায় জানিয়ে অনেকটা চিন্তিতভাবে পাশে থাকা চেয়ার টেনে বসে পড়লেন শাহানারা___
-মা কি ভাবছো এতো?
আর মা বোরকাওয়ালীটা কে? বুঝলাম না তো?
মেয়ের কথায় চিন্তাশীল নয়নে মেয়ের দিকে তাকান তিনি___
__কি হলো মা চুপ কেন?
-কি বলবো রে মা! এই মেয়েটা কে,,,,আমার ছেলেটার মাথা খাচ্ছে……
মায়ের কথায় চোখ বড়বড় করে মায়ের দিকে তাকালো মিম___
-তাহলে ভাইয়া প্রেমে পড়েছে রাইট!
মেয়ের কথায় জাহানার বেগম ক্ষেপে উঠলেন……
-খবরদার মিম! এই শব্দটা মুখেও আনবি না,,,,
ও কাল আমাকে যেভাবে মেয়েটার বর্ণনা দিয়েছিল তখনই মেজাজ চড়া হয়ে গিয়েছিল! এমন মেয়েকে আমার ছেলের বউ দূরের কথা এই ঘরের ত্রিসীমানায় ও পা রাখতে দিব না……
:
নুসরাত বড়সড় তিনতলা বিশিষ্ট বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে……
বিল্ডিংটার দিকে চেয়ে নিজের সাথেই কথা বলে নুসরাত__
-ইশ এই বড়লোকরা অযথাই টাকা গুলো খরচ করে!
এতো বড় বাড়িটা বানিয়ে এতো টাকা খরচ না করে এর কিছু টাকা যদি গরিবদের দিয়ে দিতো তাহলে আজ আমাদের মতো গরিবরা রাস্তায় রাস্তায় মানুষের লাত্তি গুতা খেতে হতো না………
__এই যে কে আইন্নে,,,এইহানে দাঁড়ায় আছেন কেন!
তিনতলা বাড়িটা থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে সামনে থাকা মধ্যবয়স্ক লোকটার দিকে তাকালো নুসরাত……
__কি হইলো কথা কইতাছেন না কেন?
-আসসালামু আলাইকুম!
ইয়ে মানে,,,আমাকে এই বাড়ির মালিক আসতে বলেছিলেন,,,উনার মেয়েকে পড়ানোর জন্য।
__ওহ সরি সরি আপা! স্যার কইয়া গেছিলেন,,,আমি একদম ভুইলা গেছি!
আসেন আসেন ভিতরে আসেন!
গেইটে দাঁড়িয়ে থাকা দাড়োয়ান সদর গেইটটা খুলে দিলো……
মুচকি হেসে নুসরাত বিসমিল্লাহ বলে বাড়িতে পা রাখলো………
:
-মা যদি কোনভাবে মেয়েটা এই বাড়িতে চলে আসে তখন?
মাকে পালটা প্রশ্ন করলো মিম……
-আসলে ওর ঠ্যাং ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দিবো!
মায়ের উত্তরে খিলখিল করে হেসে দিলো মিম……
মেয়ের হাসির দিকে বোকার মতো তাকিয়ে রইলেন শাহানারা__
-এতোদিন শুনতাম শাশুড়িরা দজ্জাল হয়,,কিন্তু প্রাকটিকালি সত্যি কি না তা দেখিনি! কিন্তু মা আজ আমার নিজ চুক্ষে তা দেখে নিয়েছি,,,
-কি....কি দেখে নিয়েছিস!
-এই শাশুড়িরা যে দজ্জাল হয়!
মেয়ের দিকে গরম চোখে তাকালেন শাহানারা বেগম___
মায়ের চাহনী দেখে চুপটি করে খাওয়ার টেবিলে বসে পড়লো মিম………
এর খানি মিনিট পাঁচেক পড়ে টিংটিং করে কলিং
বেল বেজে উঠলো…
তড়িঘড়ি করে কাজের মেয়েটি দৌড়ে এসে দরজাটা খুলে দিয়ে দিলো এক চিৎকার__
-ভুত ভুত মায়ায়ায়ায়া ভুউত……
কাজের মেয়ের চিৎকার শুনে দৌড়ে শাহানারা বেগম সদর দরজায় ছুটে গেলেন,,
মায়ের পেছন পেছন মিম ও ছুটলো……
-সম্পূর্ণ কালো কাপড়ে আবৃত ব্যক্তিকে দেখে শাহানারা বেগমও প্রথম ঘাবড়ে গেলেন__
কিন্তু পরক্ষণেই সামনে থাকা মানুষটির কন্ঠ শুনে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিলেন শাহানারা……
-আসসালামু আলাইকুম..
মিষ্টি কন্ঠে সালাম জানালো নুসরাত সামনে থাকা মহিলা শাহানারা বেগমকে…
-আম্মা ভুতেরা কি কথা কইতে পারে……
শাহানারা বেগমকে ফিসফিসিয়ে প্রশ্ন করলো কাজের মেয়েটি……
প্রতিউত্তরে ধমক দিয়ে কাজের মেয়েটিকে নিজ কাজে পাঠিয়ে দিলেন তিনি……
পাশ থেকে মায়ের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসয়ে প্রশ্ন করলো মিম……
__মা ভাইয়ার হবু……
মেয়ের কথায় আবার ও রক্তচক্ষু নিয়ে মেয়ের দিকে তাকালেন……
মায়ের তাকানোতে মিম চুপটি করে মুখে হাত দিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে রইলো……
.
-কে তুমি?
-আ……
__আমি বলছি ম্যাডাম,,,,
পেছন থেকে দাড়োয়ান এসে নুসরাতের পাশে দাঁড়িয়ে কথাটি বললেন……
শাহানারা বেগমের দৃষ্টি তখনও নুসরাতের ড্রেসয়াপ এর দিকে পড়ে আছে,,,
-ম্যাডাম সাহেব উনাকে আসতে বলেছেন! উনি নাকি আমাদের ছোট আপামণির টিচার……
-টিচার কই আমাকে তো কিছু জানানো হয় নি?
মিষ্টির টিচার যে ঠিক করা হয়েছে……?
নুসরাতের মন চাইছে এখান থেকে দৌড়ে বাড়ি চলে যেতে,,,,বিরক্ত লাগছে এতোক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে……
পেটে টান না থাকলে কক্ষনো এইভাবে রোদ-বাদলে বের হতো না সে___
:
__কে এসেছে ইমনের মা!
স্বামী আরমান সাহেবের ডাকে পেছনে ফিরলেন শাহানারা বেগম……
আরমান সাহেব সিঁড়ি বেয়ে একপা দু পা করে নেমে শাহানারা বেগমের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন……
-উনি না কি আমারে মিষ্টুর টিচার___
-ওহ হ্যাঁ আমি তোমাকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম! আমাদের পাশের গ্রামের আশরাফের মেয়ে না তুমি।
-নুসরাত হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো……
-কাল আশরাফের সাথে বাজারে দেখা হয়েছিল কথায় কথায় ওর মেয়ের কথা উঠলো।।
তাই আমিও চিন্তা করলাম যে আমার মিষ্টুর জন্যও তো একজন টিচারের দরকার,,,
তাই তাকে মেয়েকে পড়ানোর কথা বললাম।
আরে মা তুমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
ভেতরে আসো,,,শাহানারা তুমিও না মেয়েটাকে এতোক্ষণ বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখলে,,,
-রাখবো না! আমাকে জানতে হবে তো কে কি উদ্দেশ্যে আসলো! যেই -সেই কে তো আর আমার ঘরে আসতে দিতে পারি না।
নুসরাতের দিকে তাকিয়ে কঠিন স্বরে কথাটি বললেন শাহানারা……
শাহানারা বেগমের কথার ইঙ্গিতেইই নুসরাত বুঝে ফেললো কথাটা আর কাউকে নয় তাকেই উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে……
মাথা নিচু করে ঘরে ঢুকলো নুসরাত……
:
-নুসরাতের বাবা কি হয়েছে তোমার,,,এমন করছো কেন তুমি?
-নুসরাতের মা আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না! আল্লাহ!
-মোহম্মদ,,,আমিনুল কোথায় তোরা,,তাড়াতাড়ি আয়! দেখে যা তোদের বাবা কেমন জানি করছে……
পাশের ঘর থেকে মায়ের চেঁচামেচি শুনে দৌড়ে ছুটে এলো দুই ভাই……
শাহিনা বেগম- তাড়াতাড়ি নুসরাতকে ফোন দে আমিনুল।
তড়িঘড়ি করে নুসরাতের নাম্বারে ডায়াল করলো আমিনুল…
:
নুসরাত মাত্রই মিষ্টির সাথে পরিচিত হয়েছে,,,
মিষ্টিরর কথাবার্তা নামের মতোই মিষ্টি লেগেছে নুসরাতের কাছে……
মিষ্টি-ম্যাডাম আপনি এই কালো কাপড়টা খুলেন না! দেখবো আপনাকে!
-খুলবো!
-হুম খুলুন!
__যদি কেউ এসে যায়?
নুসরাতের কথায় মিষ্টি দৌড়ে গিয়ে দরজা আটকে দিলো……
__আর কেউ আসবে না ম্যাডাম!
মুচকি হেসে নুসরাত নিকাব তুলে দেয়……
-মাশা'আল্লাহ ম্যাডাম আপনি এতো এতো সুন্দর…
দরজা আটকে থাকার কারণে শাহানারা বেগম জানাল দিয়ে নুসরাতকে ফলো করছিলেন!
নুসরাতের উজ্জ্বল মায়াবী চেহারা দেখে উনি অনেকটা চমকে যান!
উনার ধারণাতে ছিল,,নুসরাত দেখতে হয়তো খুব বাজে তাই এইভাবে নিজেকে ঢেকে রেখেছে……
কিন্তু উনার ধারণাটি নিমিষেই পালটে গেলো…
খানিক পরে,,,
নুসরাতের মোবাইলটা বেজে উঠিলো,,
রিসিভ করে ওপাশের কথোপকথন শুনে টপটপ করে নুসরাতের চোখ দিয়ে বাধল ধারা ঝড়ে পড়ে……
তড়িঘড়ি করে নিকাবটা মুখের উপর টেনে দিয়ে উঠে দরজার দিকে ছুটে চলে সে……
পেছন থেকে মিষ্টি কয়েকবার ম্যাডাম ম্যাডাম বলে ডাকলেও সারা দিতে পারে নি নুসরাত……
দরজা খুলেই শাহানারা বেগনের সম্মুখীন হয় সে,,
পথ আটকে দাঁড়িয়ে আছেন নুসরাতের……
-এই মাত্র এলে,,,এতো তাড়াতাড়ি কোথায় যাচ্ছ!
-আ.আমার বাবা অসুস্থ হয়ে গেছেন তাই……
শাহানারা বেগমকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো নুসরাত,,
সদর দরজায় যাওয়ার পর,,
পেছন থেকে শাহানারা বেগমের চেঁচামেচি শুনা যায় স্বামীর সাথে"
__যে প্রথম দিনই নুসরাত ফাঁকিবাজি করেছে,,,তাহলে নুসরাত ফাঁকিবাজ,,,তাই নুসরাতকে মিষ্টিকে পড়ানো বাদ দেওয়া হোক"
নুসরাত সেসব কথার আর তোয়াক্কা না করে সামনে পা বাড়াতেই আবার পা টা পেছনে নিয়ে এলো,,,
সেই দিনের সেই লোকটা,,,
কিছুক্ষণের জন্য থেমে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে চোখটা নিচু করে পাশ ঘেষে নিজের গন্তব্যপথ ধরলো নুসরাত,,,
নুসরাতের যাওয়ার পানে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ইমন……
0 Comments